শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের নামে
ফজলুল কবিরঃ
আজকের দিনে শিক্ষা ধ্বংসের মুখে। শিক্ষকও ধীরে ধীরে পাঠদানের সাথে সাথে জড়িয়ে পড়ছে ঘুষ বাণিজ্যে। যে শিক্ষা মানুষকে ন্যায়নীতি ও আদর্শবান করে তোলে, সেই শিক্ষাই যদি শিক্ষকের হাতেই অপমানিত হয়, তাহলে শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে? অন্যদিকে, যে শিক্ষা ঘুষ, মাদক ও সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে ঘৃণার চোখে দেখে, সেখান থেকেই এখন শুরু হচ্ছে অপরাধের রাজত্ব। এমনই নজিরবিহীন একটি ঘটনা ঘটেছে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়নের দিঘলীয়া আলহাজ্ব জয়েনউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং একজন ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ৩১শে জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমকাল ও পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইছামতি পত্রিকায়।
প্রতিষ্ঠানে জনবল প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে—কলেজ পর্যায়ের পদকে স্কুল পর্যায়ের পদ হিসেবে দেখিয়ে নিয়োগ দিয়ে জনবল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ, এবং এই ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং ক্ষমতাসীন দলের পুঙ্গলী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে—শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে ক্লাস না নেওয়া, আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়া, প্রতিষ্ঠান থেকে বই বিক্রি করাসহ আরও নানা অনিয়ম। এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি দাম্ভিকতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নিমগ্ন।
চা-স্টল থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মনে প্রশ্ন—একজন অধ্যক্ষের কি এমন হওয়া উচিত?
এই অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেনের কাছে প্রতিষ্ঠানের জনবল নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে অভিযোগ দিয়েছে, তার কাছেই তথ্য আছে—তাকে কিসে নিয়োগ দিয়েছি, কবে দিয়েছি। নিয়োগ নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।”
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এম.পি.ও. নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী বলা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় তথা কলেজ শাখায় ল্যাব সহকারী (পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উদ্ভিদবিজ্ঞান/প্রাণীবিজ্ঞান বিষয় অনুমোদন ও ল্যাব চালু থাকলে) একজন নেওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক ও কর্মচারীর জনবল কাঠামোতে ১৯টি পদ চালু থাকলেও ‘ল্যাব সহকারী’ নামে কোনো পদ নেই—শুধু ‘কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর’ (সরকার প্রদত্ত কম্পিউটার ল্যাব চালু থাকলে) একজন নিয়োগের উল্লেখ আছে।
কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই ভুয়া নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।