রাজধানীর যানজট নিরসনে যে উড়াল সড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ করা হচ্ছে, তা বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হবে। নতুন করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে, তার সবাই থাকবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে। আর সে কারণেই উড়াল সড়ক টার্মিনালটির সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। চার লেন বিশিষ্ট ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়াল সড়ক এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পর্যটন ও পরিকল্পনা) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান। এর পাশাপাশি তৃতীয় টার্মিনালের কাজও চলছে। যাত্রীরা যাতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেজন্য সেতু বিভাগ ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সূত্র জানায়, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে ৬টি কানেকটিং পয়েন্টে ডিজাইন ও নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে পিপিপির আওতায় নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে টার্মিনালের কানেকটিভিটির ডিজাইনটি রিভিউ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। রিভিউয়ের পর তা মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় তিনতলা বিশিষ্ট নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে, যার আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এর বাৎসরিক যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১২ মিলিয়ন। তাছাড়া টানেলসহ ৬২ হাজার বর্গ মিটার আয়তন বিশিষ্ট মাল্টি লেভেল কার পার্কিংয়ের ধারণ ক্ষমতা ১২শ’ গাড়ি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় পৃথক এক্সপোর্ট এবং ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স এবং রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং সুবিধা ইত্যাদি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। ২০২১-২০২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৮৪ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
প্রকল্পের আওতায় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ অংশের ৩ হাজার ৪৯টি পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। টানেল অংশের ৪৬৮টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২৯০টি শেষ হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ২৯৪টি পাইলিংয়ের মধ্যে ১৫৬টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৬৮৬টি পাইলিং ক্যাপের মধ্যে ৩২২টি পাইল ক্যাপ পরানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীন হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে (সাউথ) এবং মূল এপ্রোন অংশের ভূমি উন্নয়ন, ড্রেনেজ, ডাক্ট লাইনের কাজ চলমান। এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের টেস্ট পাইল ওয়ার্ক শেষে পাইলিং কাজ শুরু হয়েছে। ৯০৯টি পাইলিংয়ের মধ্যে ৩০৮টি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের পাইলের লোড টেস্টিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এ অংশে মূল পাইলিং কাজ শুরু হবে। ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের মূল কাজ শুরুর লক্ষ্যে ভূমি উন্নয়ন কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, পূর্ত কাজের আওতায় পার্কিং এপ্রোন, ট্যাক্সিওয়ে সার্ভিস রোড, এলিভেটেড রোড এবং ড্রেনেজ সিস্টেম পানি সরবরাহ, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম, কমিউনিকেশন সিস্টেম ও ভবনের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সমাপ্ত হলে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেকিং কাউন্টার, ২৫৮টি বহির্গমন সিকিউরিটি ক্লিনিং, ৬৭টি ব্যাগেজ এক্সরে স্ক্রিনিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ৫২টি মেটাল ডিক্টেটর, ১২৮টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৩৫টি এসকেলেটার এবং ৪৩টি এলিভেটর/লিফট সংযোজিত হবে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের স্থলে মেডিক্যাল সুবিধাদিসহ মেডিকেল সেন্টার, ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার সুবিধা ও অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাসহ জরুরি ওষুধের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। কোডিড-১৯ টেস্টের জন্য স্যাম্পল কালেকশন বুথ হত ও টেষ্ট করোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এ পর্যন্ত সাইটে ২০ হাজার ৯৭৬ জনকে কোভিড-১৯ টেষ্ট করানো হয়েছে যাতে ২৯০টি পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১১১ জন সুস্থ হয়েছেন। এছাড়া করোনাকালীন নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ৯০০ জনের সাময়িক লেবার শেড নির্মাণ করা হয়েছে।