রোববার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের পক্ষে প্রচারণায় চট্টগ্রামের রাস্তা-ঘাটকে ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। ওই বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তার বক্তব্যটি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাইরাল করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে বুধবার সমকালের সঙ্গে এক আলাপে জানালেন রিয়াজ।
তিনি বললেন, ‘একদল লোক আমাকে হেয় করতেই বক্তব্যটি নেতিবাচকভাবে প্রচার করছে। পুরো বক্তব্যটি শুনলে বুঝতে পারবেন আমি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছি।’
২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বক্তব্যটি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাইরাল করা হয়েছে উল্লেখ করে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তিনি। সেখানে রিয়াজ লেখেন, ‘গত রোববার আমি আমার কিছু সতীর্থ তারকাদের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণাতে অংশ নিতে যাই। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আসার সময় মনে হয়, এতো বাংলাদেশের নয়; ইউরোপের কোন রাস্তা। অত্যান্ত হর্ষ ও গর্ববোধ করি এ নিয়ে। এরপর সারাদিন ধরে চলে উৎসবমুখর এবং স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী প্রচারণা। আর সবসময়ের মতোই চট্টগ্রামের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হই।
চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয় অনেক বড় ও তারা মানুষকে অনেক সম্মান করেন। সারাদিনের প্রচারণা শেষে ঢাকা এসে আমি ক্লান্ত হয়ে দুটা দিন বিশ্রাম নেই। বিশ্রাম শেষে ফেসবুক তথা সামাজিক গনমাধ্যমে এসে দেখি তুঘলকি কাণ্ড!
কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে বলা হয়েছে আমি নাকি বলেছি, আমার কাছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার “পুরো রাস্তাটাই” ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে। ভুঁইফোঁড় অনলাইন মিডিয়াগুলোর প্রধান কাজই মানুষের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কিছু ক্লিক কামানো, এটাই তাঁদের রুজিরুটি। প্রথমতই আমি প্রশ্ন করতে চাই আমার এই বক্তব্যের ভিডিও সবখানে আছে, আমাকে দেখাতে পারবেন সেই ভিডিওতে আমি কোথায় বলেছি যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে “পুরো রাস্তাটাই” ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে?
স্ট্যাটাসে রিয়াজ আরও লেখেন, আমি একটি নির্বাচনী প্রচারণার মাঝখানে ছিলাম, প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম, একটি উৎসবমুখর পরিবেশের উত্তেজনাতে ছিলাম। সেখানে একটি ঝটিকা স্পট ইন্টারভিউতে তো আমার এতো ডিটেইলস বলা সম্ভব নয় যে এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মূল শহরে আমি চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ রোড করে আসি এবং সেই রাস্তাটিকে আমার উন্নত বিশ্বের রাস্তার মতোই মনে হয়। আপনাদের এই ধরণের কাজে আমি আসলেই হতবাক। আমার কিছুই বলার নেই। কিন্তু এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় একটি বিশেষ মহল। তারা আমার নিউজটিকে নিয়ে শুরু করে অশালীন এবং অসভ্য ভাষার আক্রমণ। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটিকে ভাইরালও করে। অন্যকোনো সময় হলে কিংবা অন্য কেউ হলে আমার আসলেই হয়তো অনেক রাগ উঠতো কিন্তু আমার এই মুহূর্তে খুব হাসি পাচ্ছে। হাসি পাচ্ছে কারণ, যারা এই অশ্লীল আক্রমণগুলো করছেন তাদের সিংহভাগই হলো সেই কুচক্রী মহলের লোক যারা নাকি একজন রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়।
এরা রাজাকারকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ অব্দি এরা বাংলার সহজসরল মানুষগুলোকে বিভ্রান্তি এবং গুমরাহির মাঝে ফেলে দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে চলেছেন। দেশকে প্রতিনিয়ত পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এরা বাঁধাগ্রস্থ করবার চেষ্টা করছে। যারা দেশের এতবড় সর্বনাশে লিপ্ত তাঁদের গুজবের ব্রহ্মাস্ত্রের কাছে আমি রিয়াজ এক তুচ্ছ বলি। তাই সত্যিকার অর্থে আমি চিন্তিত আমাকে নিয়ে নই, দেশের সরল মানুষগুলোকে নিয়ে।’
সবার কাছে প্রশ্ন রেখে রিয়াজ লিখেছেন, ‘আমি নেটিজেনদের কাছেও একটি প্রশ্ন রাখতে চাই। বাংলাদেশকে কি আপনারা এখনো এতোই ফেলনা মনে করেন? আপনাদের কি মনে হয় বাংলাদেশে আসলেই এমন কোন সড়ক কিংবা স্থাপনা নেই যা উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিতে পারে? নিজ দেশের প্রতি আপনাদের কি এতোটুকুও আস্থা নেই? এই আপনাদের দেশপ্রেম কি এতোই নড়বড়ে যে কিছু কুচক্রী গুজববাজের কথা শুনে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন? না ভাই, বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। সেই দিন অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দূর্বার বেগে ধাবমান। আমি কিছু ছবি দিচ্ছি, এখানে দেখে আপনারা নিজেরাই বিচার করুন যে আমরা আসলেই এগিয়েছি কিনা।
বাংলাদেশে আসলেই উন্নত বিশ্বের সমতুল্য স্থাপনা আছে কিনা। আমি অনুরোধ করছি যে এসব গুজববাজদের কথায় কান দেবেন না। এরা দেশের শত্রু, এরা আপনার শত্রু। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দেক, মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে রক্ষা করুক এসব গুজববাজদের হাত থেকে। আর উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এভাবেই এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!’