ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (২১ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারান। একই সময়ে অবরোধজনিত খাদ্য সংকট ও অনাহারে মারা গেছেন আরও তিনজন। ফলে গাজায় অনাহার-সম্পর্কিত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে। এদের মধ্যে ১১২ জন শিশু।
ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছে। সেখানে এখনো প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটে আটকে রয়েছেন।
আল জাজিরার তথ্যমতে, দক্ষিণ গাজার একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গুলিবর্ষণে প্রাণ হারান ফিলিস্তিনি জাতীয় বাস্কেটবল দলের সাবেক তারকা মোহাম্মদ শালানসহ আরও কয়েকজন। শুধু বুধবারেই ত্রাণ প্রত্যাশী অন্তত ৩০ জন ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ‘এটি শুধু ক্ষুধা নয়, এটি প্রকৃত অনাহার।’ ডব্লিউএফপি আরও জানিয়েছে, অপুষ্টি এক ধরনের “নীরব হত্যাকারী” যা শরীরে স্থায়ী ক্ষতি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং সাধারণ রোগকেও প্রাণঘাতী করে তোলে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজা সিটিতে প্রতি তিন শিশুর একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি আবারও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, তাদের কর্মীরা ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে জীবন ঝুঁকির মুখে কাজ করে যাচ্ছেন।’
মানবাধিকার সংগঠন গিশা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল সরকার একের পর এক মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে গাজায় অনাহারের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। বাস্তবে শুরু থেকেই ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে এটিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের ভাষায়, ‘ইসরায়েল এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা গাজায় সাহায্য পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।’
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তীব্র জ্বালানি ঘাটতির কারণে উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের অনেক গাড়ি মিশনে বেরিয়ে পড়ার পর থেমে গেছে—কখনো জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায়, কখনো যন্ত্রাংশের অভাবে। ইসরায়েলের গণবিধ্বংসী যুদ্ধের হুমকির মধ্যে আমরা ভয়াবহ মানবিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’
