হঠাৎ শোনা গেল ঢালিউড তারকা মাহিয়া মাহির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বেশ আগেই তাঁরা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি সেটা প্রকাশ করেছেন। কেন এই বিচ্ছেদ, এখন কী ভাবছেন তিনি। এসব নিয়ে কথা বললেন।
এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?
নানাবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ঈদের পরদিন রাজশাহীতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলাম। সেখান থেকে গতকাল রাতে এসেছি নানাবাড়িতে। কয়েক দিন থাকব এখানে।
বিচ্ছেদের পরও গত দুই বছর আমরা দুজন বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরেছি, আড্ডা দিয়েছি। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে। এসব দেখে মানুষ আসল ঘটনাটা জানতে পারেনি। এই ছবি দেখে সবাই ভাবেন, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই
শনিবার মধ্যরাতে আপনার ফেসবুক পেজে স্বামী অপুর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ করেই কেন এ সিদ্ধান্ত নিলেন?
এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া নয়। প্রায় দুই বছর আগে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা দুই পরিবার ছাড়া কেউ জানত না। বলতে পারেন, সবাইকে জানানোটা হঠাৎ করেই। জানানোর কারণও আছে। বিচ্ছেদের পরও গত দুই বছর আমরা দুজন বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরেছি, আড্ডা দিয়েছি। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে। এসব দেখে মানুষ আসল ঘটনাটা জানতে পারেনি। এই ছবি দেখে সবাই ভাবেন, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, আমি ঢাকায় না কি শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। এটা শুনতে নিজের কাছেই পেইন লাগে, অস্বস্তি লাগে। আমার মনে হয়, অপুকে আরও বেশি অস্বস্তিতে পড়তে হয়। কারণ, মানুষ তো জানেন না আমাদের বিচ্ছেদ আগেই হয়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে বিষয়টি সবার জানা উচিত। অপুর জন্যই সেটা বেশি দরকার। কারণ, বিষয়টি পরিষ্কার না হলে সে তো এগোতে পারবে না। আমি হয়তো আমার মতোই থেকে যাব। নিজের মতো করে মানিয়ে নিতে পারব। আমি অপুর পরিবারকে বেশি ভালোবাসি। তাই মানবিক কারণেই বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলাম।
মনে হয়েছিল এই সময়টার মধ্যে সব জাগতিক ঝামেলাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু পারিনি। অপু আমাকে খুব ভালোবাসে। সে বেশি করে চাইত সর্ম্পকটা ধরে রাখতে। সেই ভালোবাসা থেকেই অপু চেয়েছিল ঘটনাটি প্রকাশ না করার জন্য। সে ভেবেছিল, হয়তো একটা সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। তাঁর কারণেই এত দিন ঘটনাটি কাউকে জানাইনি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল, বিষয়টি গোপন রেখে অপুর ক্ষতি করে যাচ্ছি। আমার কোনো রাইট নেই তাঁর ক্ষতি করার। আসলে এত দিন ধরে জানানো, না জানানোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে বের হতে চেয়েছি আমি।
সবাই আপসেট। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাই ফোন করেছিলেন। আমি ভয়ে ফোন ধরিনি। বিষয়টি নিয়ে আমার মা–ও খুব আপসেট।
ফেসবুকে বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করার পর দুই পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী?
সবাই আপসেট। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাই ফোন করেছিলেন। আমি ভয়ে ফোন ধরিনি। বিষয়টি নিয়ে আমার মা–ও খুব আপসেট।
অপুর সঙ্গে শেষ দেখা, শেষ কথা কবে হয়েছে?
খুব কাছাকাছি সময়ে দেখা হয়নি। তবে মুঠোফোনে প্রায়ই কথা হয়। গতকাল রাতেও কথা হয়েছে। বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করার পরও কথা হয়েছে। তবে কী কথা হয়েছে বলতে চাইছি না।
আপনাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা বেশ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। শুনেছি, বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টাও করেছিলেন দুজন। ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল?
অপু তো সব সময়ই চেষ্টা করেছে। সে কখনই চায়নি আমাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক। অপু প্রচণ্ড আড্ডাবাজ, ফুর্তিবাজ একটি ছেলে। বড় কথা হচ্ছে, ভালো মনের ছেলে সে। এ কারণেই অপুকে আমার পছন্দ। শুধু তা–ই নয়, অপুর মা–বাবা ও পরিবারের লোকজন আমার খুবই প্রিয়। তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও আমার চেয়ে বেশি। আমার মনে হয়, অপুর মতো ভালো ছেলে আমার জীবনে আর আসবে না। সে এখনো একসঙ্গে থাকতে চায়।
আপনি বলছেন অপু ও তাঁর পরিবারের লোকজন সবাই ভালো। তাহলে বিচ্ছেদ কেন?
গতকাল থেকে হুমায়ূন আহমেদের ‘দ্বৈরথ’ বইটি পড়ছি। বইটির একটি চরিত্র বলছে, তেলে ও জলে মেশে না। এটি ভুল কথা। তেলে–জলে মেশে ঠিকই, কিন্তু একটু ঝাঁকাঝাঁকি করতে হয়। আমি বেশি ঝাঁকাঝাঁকি পছন্দ করি না। ঝাঁকাঝাঁকি করলে হয়তো কিছুক্ষণের জন্য মিলবে। কিন্তু পরে আবার যেই লাউ সেই কদু হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের দুজনের একসঙ্গে থাকার বিষয়টি এ রকমই ছিল। এর চেয়ে ভালো বর্ণনা করতে পারছি না।
প্রায় দুই বছর আগে বিচ্ছেদ হলেও দুই পরিবার ছাড়া ঘটনাটি গোপন ছিল। এই সময়টায় অপু বা অপুর পরিবারের সঙ্গে আপনাকে দেখা গেছে। বিচ্ছেদের খবর জানাজানি হওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কটা কি থাকবে?
ফেসবুকে ঘটনাটি লেখার পর অপু ছাড়া তাঁদের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার কথা হয়নি। সত্যি বলতে কি, অপুর পরিবার আমাকে এতটাই সম্মান দিয়েছে, যে সম্মান আর কোথাও পাব কি না জানি না। এ ঘটনার পর তাঁদেরকে সামাজিকভাবে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এতে আমার প্রতি তাঁদের সেই সম্মানবোধ না–ও থাকতে পারে। আর আমার পক্ষ থেকে সারা জীবন তাঁদের প্রতি সম্মান থেকে যাবে। বিচ্ছেদের ঘটনাটি জানানোর সময় তাঁদের নিয়ে এ কথাগুলো লিখেই ফেসবুকে দিয়েছি।
পারিবারিক দিক থেকে মনে হচ্ছে কোনো সমস্যাই নেই। আপনাদের দুজনের কি আবারও এক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?
এখন পর্যন্ত সেটা নেই। তবে ভবিষতে কী হবে, তা বলা মুশকিল। কারণ, নিয়তি কাকে কখন কোথায় কীভাবে নিয়ে দাঁড় করায়, সেটা কেউই বলতে পারে না। আমাদের দুজনের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের কমতি নেই। সবই ঠিক ছিল, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে আমাদের একসঙ্গে থাকা হলো না।
অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল আপনি অন্য আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ঘটনাটি কি সত্য?
না না , এসব সত্য না। আপাতত এসবে জড়াচ্ছি না। এখন আমি ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিচ্ছি। কাজে ব্যস্ত থাকব। অনেক দিন ধরেই ভাবছি দেশের বাইরে যাব। দেশের বাইরে স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছা আছে। সিনেমার কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেই প্রক্রিয়াটিও চলবে।
এখন কোন কোন সিনেমায় কাজ করছেন?
এই মুহূর্তে ‘নরসুন্দরী’, ‘বুবুজান’, ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘আবির্ভাব’, ‘গ্যাংস্টার’ ছবিগুলোতে কাজ করেছি। এর মধ্যে দু–একটি ছবির কাজ প্রায় শেষ।