ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ অপরিচ্ছন্নতা। না ধুয়ে টানা ২-৩ সপ্তাহ একই মাস্ক পরলে এ সংক্রমণ হতে পারে। করোনার মধ্যে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ নিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এমন সতর্কবার্তাই উচ্চারণ করেছেন।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এইমস) স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. পি শরৎচন্দ্র দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোয় জানিয়েছেন যে, ছত্রাক জাতীয় মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের পিছনে বড় কারণ অপরিচ্ছন্নতা।
তার কথায়, ‘অনেকেই ২-৩ সপ্তাহের বেশি সময় না ধুয়ে একই মাস্ক ব্যবহার করে যান। তার থেকেও ছড়াতে পারে এই সংক্রমণ।’ এর সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাস্ক পরিবর্তন কিংবা ব্যবহৃত মাস্ক সাবান-জীবাণুনাশক দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
তার এমন দাবির এখনও যথেষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলেও দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুরেশ সিং নারুকা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই ছত্রাকের সংক্রমণের পেছনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বড় ভূমিকা থাকতে পারে।
তিনি বলছেন, ‘এক মাস্ক পরা তো বটেই, তার পাশাপাশি বাতাস চলাচল করে না এমন ঘরে বসবাসও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ হতে পারে।’ তবে এর পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তদের অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারকেও তিনি অনেকাংশে দায়ী করেছেন।
তার মতে, ‘কোভিড সংক্রমণ নিয়ে সন্দেহ হলে অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়েই স্টেরয়েড নিতে শুরু করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন না। স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও এই সংক্রমণের পিছনে কারণ হতে পারে।’
ভারতে ৯ হাজার মানুষ ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ আক্রান্ত
ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ
মহামরি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে গোটা ভারতে প্রকোপ শুরু হওয়া মিউকরমাইকোসিস অর্থাৎ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯ হাজার জনের দেহে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্র সরকার ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাকের সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করে সব রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে। এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পর দেশটিতে আরও বিপজ্জনক হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
রোগটি মূলত করোনা রোগীদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। অতিরিক্ত স্টেরয়েড নেওয়া, বেশি দিন হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা অথবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এই ছত্রাকের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর উৎস শাকসবজি, মাটি, ফল ও একই মাস্ক প্রতিদিন পরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কোভিডের মতো এটি সংক্রামক নয়। সাধারণত আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, নাক-চোখ লাল হওয়া, দৃষ্টি কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও রক্তবমির মতো উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি পেতেও শুরু হয়েছে হাহাকার। ইতোমধ্যে এই অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি ওষুধ তৈরির জন্য পাঁচটি কোম্পানিকেনতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে গত শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।