তিস্তাসেচ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে এক লাখের বেশি হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। ফলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়বে।
একইসঙ্গে অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ৮৬ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদ পযর্ন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি নীলফামরীর সদর, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডিমলা ও জলঢাকা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিবন্দর এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া, সদর, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে বাস্তবায়িত হবে।
তিস্তাসেচ প্রকল্প এলাকার সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সেচের আওতা বাড়বে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অধিকতর উন্নীতকরণ, পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত ৩০ লাখ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৭৭১ কিলোমিটার খাল ও সেচ কাঠামো শক্তিশালীকরণ, ৭২ কিলোমিটার সেচ পাইপ স্থাপন, ১ হাজার ৮৫টি সেচ কাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এছাড়া ২৭টি কালভার্ট, চারটি সেতু, ৬০টি নিকাশ কাঠামো, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ৬টি রেগুলেটর মেরামত করা হবে। এর পাশাপাশি ২৭০ হেক্টর জলাশয় পুনঃখনন, সাড়ে ৯ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা ও ফুটপাত স্লাব ও ৬৮ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা মেরামত করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের পানির অভাবে প্রকট শস্যসংকট একটি চিরন্তন সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে তো বটেই আমন মৌসুমেও খরা দেখা দেয়। একমাত্র তিস্তা ছাড়া অন্যান্য ছোট নদী এবং খালে পানি প্রবাহ খুবই কম। তাই তিস্তায় ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ব্রিটিশ আমলেই সৃষ্টি হয়। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গুড্ডিমারী ইউনিয়নের পিত্তিফোটা মৌজার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যারেজ নির্মিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৭৯ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়ানো হয়। এছাড়া তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যকারিতাও বাড়ে।
তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের ফলে লালমনিরহাট জেলা থেকে রাজধানীসহ দেশের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমেছে। এই ব্যারেজের উজানে তিস্তার বামতীর বরাবর অ্যাফ্লোক্স বাঁধ ঠ্যাংঝারা বর্ডার (ভারত) পর্যন্ত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে এই অংশের সাত কিলোমিটার নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। উজানের বালুময় জমি উর্বর ফসলি জমিতে পরিবর্তিত হওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ৬ হাজার হেক্টর ভূমি নদীগর্ভ থেকে উদ্ধার পূর্বক ফসলি জমিতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে অনাবাদি জমি ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। নতুন প্রকল্পের ফলে বছরে আরও হাজার কোটি টাকার ফসল মিলবে।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো-ডাক, টেলিযোগাযোগে ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগে নেটওয়ার্ক স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্প, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড-মোড়েলগঞ্জ রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের (আর-৭৭৩) ১৭তম কিলোমিটারে পানগুছি নদীর ওপর পানগুছি সেতু নির্মাণ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (২য় পর্যায়) প্রকল্প, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘রাঙামাটির কারিগরপাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প এবং কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাপবিবোর বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ) প্রকল্প।