ঢাকার দোহার উপজেলার মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা। ১৪৮৩ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ৪টি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৪ দশমিক ৬ ভাগ। শুধু এই প্রকল্পই নয়, এ রকম ব্যয়বহুল আরও অন্তত ২২টি প্রকল্পের অগ্রগতি ‘হতাশাজনক’ বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ঠিকাদারের সুবিধা অনুযায়ী প্রতিবছর কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু কাজ আর শেষ হয় না। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘কাজের মান সন্তোষজনকও নয়।’ সবগুলো প্রকল্পই ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) বাস্তবায়নের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এই ফাঁদে আটকা পড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে চরম অস্বস্তিতে আছেন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন সার্কেলের একজন সিনিয়র প্রকৌশলী বলেন, নদী খনন বা ড্রেজিংয়ের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে না পারলে ওই কাজ বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না। কারণ এগুলো পানির নিচের সূক্ষ্ম ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ। ড্রেজিংয়ের জন্য যখন প্রকল্প প্রস্তুত করা হয় তখন নদীর তলদেশের ওই সময়কার অবস্থা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মাটি বা বালির পরিমাপ এবং এ সংক্রান্ত নকশা প্রস্তুত করেন। নকশা মেনে নির্ধারিত সময়ে যদি ঠিকাদার সঠিকভাবে ড্রেজিং না করেন বা আংশিক কাজ করেন তাহলে ওই কাজ করা এবং না করার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে এক বছরের কাজ আরেক বছর সময় বাড়লে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের ত্রুটি হলে এক বর্ষা চলে গেলে কোথায় নদী খনন করা হয়েছিল তার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। এতে করে সম্পূর্ণ প্রকল্পই ব্যর্থ হবে। অনর্থক সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাবে, কোনো উপকারেই আসবে না। এক কথায় বলা যায়, জলের কাজ জলেই চলে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই প্রকৌশলী বলেন, নদীশাসনের বেলায়ও এমন ফল হবে। কারণ যে নদীতে ভাঙন ঠেকানোর উদ্দেশ্যে প্রকল্প দেওয়া হয় সেখানে যদি সময়মতো কাজ না হয় তাহলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। মোট কথা, প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদকাল অতিক্রম হলে ডিজাইনেরও পরিবর্তন হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগের ডিজাইন আর কাজে লাগবে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) পর্যালোচনা সভায় যেসব কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়, সেখানে উল্লেখিত অনিয়মের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এসব কার্যপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ রকম বেশ কয়েকটি মিটিংয়ের কার্যপত্র হাতে এসেছে। যেখানে এসব ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলোর করুণ পরিণতির চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু বছরে অন্তত ৬টি এডিপি মিটিং অনুষ্ঠিত হলেও শেষমেশ এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
কালোতালিকাভুক্ত সাব-ঠিকাদারে সর্বনাশ : লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ৩২ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল। চুক্তিবদ্ধ এই সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বহু আগেই। এরপর আরও দুই দফায় প্রকল্প শেষ করার জন্য সময় বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত। এখনো এই প্রকল্পে বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৭৬ ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের বিষয়ে মতামতের কলামে বলা হয়েছে, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সাব-ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ নেই। তবে কাজ বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কাজের সময়ানুপাতিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এবার এখনো একত্রীকরণ (মোভিলাইজেশন) হয়নি।’ নথিপত্রে দেখা গেছে, পাউবোর কালোতালিকাভুক্ত এম বশির আহমেদের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ড্রেজিং প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালের ১৪ জুন এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। ১৫০ কোটি টাকার এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে পাউবোর কালোতালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর পর দ্বিতীয়বার চলতি বছরের ১৪ জুন পর্যন্ত সময় পুনর্বিবেচনা করা হয়। হালনাগাদ কাজের অগ্রগতি এখন ৮৪ ভাগ।
কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী চ্যানেল ও বাঁকখালী নদীর পারে পুনর্বাসন প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৫ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর ৩০ জুন ২০১৯, ২৫ জুন ২০২০ এবং সর্বশেষ এ বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। হালনাগাদ অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখানো আছে কাজ শেষ হয়েছে ৬২ ভাগ। মতামতের কলামে এই প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়, ‘এই কাজটির অগ্রগতির সঙ্গে পাউবোর ভাবমূর্তি জড়িত। বিগত অর্থবছর পর্যন্ত অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই সন্তুষ্ট ছিল। বর্তমানে জনবল ও নির্মাণসামগ্রী ঘাটতির কারণে কাজে কোনো গতি নেই।’ দেখা গেছে, কালোতালিকায় থাকা ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এই কাজটির সাব-ঠিকাদার।
নোয়াখালী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে- খাল খনন, বামনি নদী খনন ও সংশ্লিষ্ট নদীতে ১৯ ভেন্ট সুইচ নির্মাণ, নোয়াখালী খাল ও মহিষমরা খালের ওপর ২ ভেন্ট ড্রেনেজ সুইচ নির্মাণ, রেগুলেশনের ডাইভারশন চ্যানেল ও ক্লোজার নির্মাণ, তীর সংরক্ষণ কাজ ও ডাইভারশন চ্যানেল খনন। আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ৩১৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি বিশ্বাস বিল্ডার্স লি. নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আছে সেই ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংও।
৪ জন মিলেও অর্ধেক শেষ হয়নি : যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলা এবং গণকবরসহ ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শেষ তো দূরের কথা, এক বছর সময় বাড়ানোর পরও ৪টি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিএসসি গ্লোবাল ও মো. ফরিদ উদ্দিন ও সেই ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং মিলে সর্বশেষ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ৪৩ দশমিক ৭৮ ভাগ। আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের বর্ধিত সময়ও শেষ হয়েছে।
বাতিলের প্রক্রিয়ায় তিতাস : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস নদী (আপার) প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল এই কাজটি শেষ করার চুক্তি ছিল। ১১৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার ক্যাসেল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইসলাম ট্রেডিং করপোরেশন জেভি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী ৪ এপ্রিল প্রকল্প শেষ করতে এক বছর বর্ধিত সময় অতিক্রম করবে। এখনো কাজের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ৬৮ ভাগ। এই প্রকল্পের বিষয়ে মতামত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘কাজের সময়ানুপাতিক অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক। ইতোমধ্যে সমাপ্তির পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদসহ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সাব-ঠিকাদার ও ড্রেজারের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে বহুবার বলা হলেও কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর পিইসি (প্রকল্পের কাজ মূল্যায়ন কমিটি) সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ বছর ৩১ জুন পর্যন্ত সম্ভাব্য অসমাপ্ত কাজের চুক্তি বাতিলপূর্বক নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়া চলছে।’
ঠিকাদার পরিবর্তনের প্রস্তাব : কক্সবাজার জেলার ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। সাব-ঠিকাদার মৌ-কন্সট্রাকশন ও ঈগল রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা। এরপর আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত তিন দফা সময় বাড়িয়ে এখনো কাজের অগ্রগতি দেখা গেছে মাত্র ফিফটি পার্সেন্ট। ১৫৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিয়োজিত সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মৌ কন্সট্রাকশন অংশের কাজের অগ্রগতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। বর্তমান বছরে কাজের মোবিলাইজেশন নেই।
ফরিদপুরের কুমার নদী পুনর্খনন প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন খনন কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সাব-ঠিকাদার ফিউচার ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চার বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪৫ ভাগ। এই সাব-ঠিকাদার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।’
১২১ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে। সেখানে ৬৮নং পোল্ডারের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৪ জুন এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দুই দফায় সময় বাড়ানো হয়। আগামী ৫ মে বর্ধিত সময়সীমা শেষ হবে। সাব-ঠিকাদার এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেড দুই দফা সময় বাড়ানোর পর দেখা যাচ্ছে এখনো কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ।
চরম অসন্তোষ : দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলাধীন গৌরীপুর নামক স্থানে খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচ প্রদানের লক্ষ্যে পুনর্ভবা নদীর ওপর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। ৪৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ৩০ জুন। এরপর আগামী ৩১ জুন পর্যন্ত এই সময় বাড়ানো হয়। এরপরও কাজের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ৭৪ ভাগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। গত বছর ১৫ জুন প্রকল্পটির কাজ শেষ না হলে এই বছর ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায় মাত্র ৫২ ভাগ অগ্রগতি। কাজটি বাস্তবায়ন করছে সাব-ঠিকাদার এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন লি.। যেভাবে কাজ করছে তাতে সরাসরি বলা হয়, ‘অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।’
রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প (ফেজ-২) প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। ২০২০ সালের ৩১ মে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্ধেক কাজও শেষ না হওয়ায় এ বছরের ৫ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ডিবিএল ড্রেজিং লিমিটেড নামের একটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। তবে এই কাজের হালনাগাদ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ৭০ ভাগ।
শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির কাজ আগামী ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা। ফিউচার ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট লি. ও বেঙ্গল স্ট্রাকচারাল লি. জেবি এবং এলিভেট বিল্ডার্স লি. গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৪৭ ভাগ।
কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল জেলার সদর উপজেলাধীন চরবাড়িয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। ২০২০ সালের ২ এপ্রিল এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগে বাস্তবে অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। এরপর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। অথচ কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৪ ভাগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে সময় আছে এক মাস। সার্বিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর নোটিশ দেওয়া হয়। অথচ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদী থেকে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমির উন্নয়ন ও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষা প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ৫০৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরা হলো আরএবি-আরসি, ইয়াসরা কনস্ট্রাকশন ও ই-ইঞ্জিনিয়ারিং। আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। বাস্তব অগ্রগতির তালিকায় কাজটি বাস্তবায়ন হয়েছে ৬২ ভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক একেএম ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এমনটা বলা যাবে না। ইতোমধ্যে সীমান্ত নদীর কাজ বাতিল করে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তবে কিছু কিছু কাজ বাতিল করা যাচ্ছে না। কারণ এই মুহূর্তে বাতিল করা হলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাবে।’
কাজের সময় কাজ না করা হলে তাতে কি সরকারের টাকা গচ্চা যাচ্ছে না? প্রশ্ন করা হলে পাউবোর এই ডিজি বলেন, ‘আসলে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। তবে নতুন করে এ ধরনের ঠিকাদারকে আর কোনো কাজ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক কিছুই তো হজম করতে হয়।’
অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাব-ঠিকাদারদের তো আর কাজ দেইনি। মূল ঠিকাদার সরকারি প্রতিষ্ঠান। অ্যাকশন নিতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেতে হবে। সীমান্ত নদীর কাজ যেভাবে বাতিল করা হয়েছে একটা পর্যায়ে ওই প্রক্রিয়ায়ই যাব।’