দেশে যাত্রাপালা নেই, নেই বিবেকের পিনপতন নীরবতা নামানো গান-সংলাপ। তাতে কী? ইসি আর ভিসিদের সার্কাস মহাসমারোহে চলছে।
দেখতেও আনন্দ, শুনতেও আনন্দ, লিখতেও আনন্দ। কেবল তাদের কোনো বিকার নেই, প্রতিকার নেই। মানুষের আনন্দে তারা গর্বিত। পৃথিবীতে মানুষকে আনন্দ আর বিনোদন দেওয়ার মধ্যে যে শক্তি তা কতজন রাখেন? আমাদের ইসি আর ভিসিরা পারেন। মানুষ এখন আর ত্যক্ত-বিরক্ত হন না। সরকারও বিব্রত হওয়া ভুলে গেছে। বিরোধী দল সমালোচনা বিবৃতিতেই শেষ। মানুষ সইতে সইতে এখন কেবল হাসে। যা করেন, যা বলেন তারা, তাই আমাদের বিনোদন।
সিইসি নূরুল হুদা থেকে ইসি মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য, একের পর এক নির্বাচন মিলে সিনেমা ভাঙার মতো আনন্দই নয়, যাত্রাপালার লোককাহিনির বিয়োগান্তক ট্র্যাজেডিই নয়, কৌতুকের রমরমা বিনোদন দেয়।
সেই সঙ্গে ভিসি কলিমউল্লাহ আরেক বহুল আলোচিত চরিত্র হয়ে এসেছেন এ মঞ্চে। যাত্রায় প্রিন্সেস লাকি খানরা একসময় রাতের ক্লান্তি দূর করে দিতেন। শেরেবাংলা নগরে লাকি খান আর তৃণমূলে প্রিন্সেস রত্নারা। তারা সত্যিকার বিনোদন দিতেন। অপরাধী ছিলেন না। দিনে দিনে দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব হয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে প্রশাসনের আপসে।
যাত্রাপালা শেষ। তাই বলে রাজনীতির পথ ধরে নষ্ট ক্ষমতাবানদের ছায়াপথে অভিজাত হোটেলের সুইমিং পুলে পাপিয়াদের ভোরের নাচ গান, সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর করোনা টেস্ট দুর্নীতির আড়ালে প্রিন্সেসদের হারমানা নাচের পসরা বসদের নিয়ে ট্রল মানুষ উপভোগ করেছে। এরা জেলে আছে। মানুষ তাদের উপভোগ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের অবস্থা বেহাল। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আখতারুজ্জামান বাংলায় কথাই বলতে পারেন না। জ্ঞানের মন্দিরের অভিভাবক হবেন কী করে। তার ভ্যাকসিন গ্রহণের শেষে করোনা ধ্বংস না করে ভ্যাকসিন ধ্বংস করার হুঙ্কার বাপরে, হাসাতেও পারেন তিনি।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির বিতর্কের অবসান হতে দেননি। দুর্নীতির অভিযোগের ঝড়ে পড়েছেন। দেশে কি আদর্শবান দক্ষ ব্যক্তিত্ববান দায়িত্বশীল অধ্যাপকদের আকাল পড়েছে যে এদের খুঁজে নিতে হয়? এদের কারা খুঁজে নেন? কোন যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেন। এতে সরকারকে বিব্রত হতে হয়। ছাত্রসমাজ শিক্ষকদের আন্দোলনে নামতে হয় আর শিক্ষার মান নিচের সুড়ঙ্গ দিয়ে নামতে থাকে।
একসময় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিরা হতেন নায়কের মতো। ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করতেন সরকারের বিরুদ্ধে। এখন আন্দোলন হয় ভিসিদের বিরুদ্ধে। কলিমউল্লাহ টকশো মিস করেন না। ফ্লাইটে আসেন। দড়িবাঁধা চশমা ঝুলিয়ে কী সুন্দর কথা বলেন আর ক্যাম্পাসে সময় দেন না। দুর্নীতির প্রমাণ ইউজিসি পেয়েছে। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে দোষারোপ করলেন। পারলে প্রমাণ করুন দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়। ইউজিসি আবার তদন্তে যাচ্ছে। লজ্জা নেই। শিক্ষামন্ত্রী কি দায়িত্ব পালন করবেন না? কলিমউল্লাহ ১ হাজার ২৬৩ দিনের মধ্যে ১ হাজার ২৭ দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলরের নির্দেশ ও তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। নিজেকে বদলান না, সমাজকে বদলাবেন! প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকা হরিলুট হবে তিনি ভিসি কলিম দায়িত্ব নেবেন না? এটা কি বিশ্ববিদ্যালয় নাকি উনার বাগানবাড়ি? মামাবাড়িতেও তো এমন আবদার চলে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আবদুস সোবহান ছেলেকে শিক্ষক বানিয়েও খুশি হননি। যোগ্যতা না থাকার পরও মেয়েকে এবং জামাতাকেও শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সিন্ডিকেটকে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নামিয়ে আনতে বাধ্য করলেন। ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করলেন। এমন লজ্জা আজ ভিসিরা জাতির ললাটেই নয়, ভাগ্যে দুঃস্বপ্নের মতো এনে দিয়েছেন। যেন ক্যাম্পাস বাপ-দাদার সম্পত্তি।
টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন ক্যাম্পাসকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগবাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারী আচরণে শেষ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিরা এমন নির্লজ্জ কেন? এত স্খলন কেন নৈতিক ভাবে’ লাজলজ্জা হায়া শরম কি নেই। কত মেধাবী পন্ডিত শিক্ষক থাকতে এদের কেন নিতে হয়। এটা কেমন শিক্ষাকাল চলছে। এদের হাতে শিক্ষা কতটা নিরাপদ?
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. শহিদুর রহমান নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে বহাল। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস রুস্তম আলী আর্থিক, একাডেমিক, প্রশাসনিক অনিয়ম দুর্নীতির কলঙ্ক নিয়ে সমালোচিত। তার মানসিক নির্যাতন ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শিক্ষকরাও রেহাই পান না। এটা কি মগের মুল্লুক? বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস নেই; আন্দোলন নেই। আছে একদল ভিসির দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা, ব্যর্থতা। এটা চলতে পারে না।
সব দলের সঙ্গে, সব মহলের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে অবসরপ্রাপ্ত আমলা নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন। জাতির জীবনে কী নির্বাচন দিয়েছে, তা জনগণের কাছে নতুন করে জানার নেই। বিজয়ী পরাজিত সব দলের নেতা-কর্মীরাই ভালো জানেন। অবসরে যাওয়া এসব অদক্ষ অথর্ব আনস্মার্ট লোকদের এনে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কোথায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা কতটা ভঙ্গুর করেছে সে হিসাবও আর কেউ করেন না। এখন সময় গেলে বিদায় হলেই মানুষ খুশি। দেশের জন্য মঙ্গল। রকিব কমিশনের চেয়েও অধম এই কমিশন হাসির খোরাক ও নির্বাচনী বেদনা গভীর করেছে।
সিইসি বলেছিলেন, সেনা শাসক জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। মারহাবা! তিনি পাবনার উপনির্বাচনে বলেছেন, রাতে ভোটের সুযোগ নেই। মানে আগে রাতের ভোটের সুযোগ ছিল। অভিযোগ করলেই বলেন, অসত্য ভিত্তিহীন। তার কাছ থেকে আমেরিকার শিক্ষা নেওয়া উচিত। ওরা ৪-৫ দিনে ফলাফল দিতে পারে না। তারা ১০ মিনিটে ফলাফল দেন। তার কথা বাদই দিলাম। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনে যেন বিরোধী দলের নেতা। নির্বাচন কমিশনের সব দায় তাকেও নিতে হবে যতক্ষণ তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। নৈতিক অবস্থান থেকে দ্বিমত হলে পদত্যাগে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। বিপ্লবী কথা বলে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই। আসলে ইসি-ভিসি মিলে সার্কাস চলছে জমজমাট। আর না দেখা গোপালভাঁড় দেখছে মানুষ। অবসরে যাওয়া যাকে-তাকে ধরে এনে আর যাইহোক ভালো ফলন হয় না। একদল কাজ নয়, দায়িত্ব নয়, নিজের সুযোগ সুবিধাই বেশি বুঝেন। তবু আজ এদেরই খুঁজেন। কারা কেন তার উত্তর নেই।